মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

এক আজিজের জেল খাটছেন আরেক আজিজ

এক আজিজের জেল খাটছেন আরেক আজিজ

স্বদেশ ডেস্ক:

যশোরের চৌগাছায় এক আব্দুল আজিজের বদলে আরেক আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন পুলিশ। কেবল নামের মিল থাকায় এক আজিজের জেল খাটছেন আরেক আজিজ। নিরপরাধ আব্দুল আজিজ কারাগারে থাকলেও প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের লোহিতমোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর নবকুমার সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর জিআর-১২৭/০৯। ২০১১ সালের ৩০ মার্চ মামলার আইও এসআই গাজী আব্দুল কাইয়ুম নয়জনকে অভিযুক্ত করে লুটতরাজ ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩ক ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে সাত নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে। চার্জশিটে এই আজিজের বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর। আট ও নয় নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার টেক্সগুরপুর গ্রামের তসলিমের ছেলে হাশেম আলী ও নুর ইসলামের ছেলে শাহাজানকে। চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে মামলাটির নম্বর হয় এসটিসি ৬১/১২।

আদালত পলাতক আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১২ সালের ১ মার্চ পুলিশ আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে। আদালত আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠান। ৫ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। অ্যাডভোকেট শাহানুর আলম শাহিন তার পক্ষে ওকালতনামা ও জামিননামা দাখিল করেন। সে সময় থেকেই আব্দুল আজিজ আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন। এই তথ্য আব্দুল আজিজের প্রতিবেশী ও সিংহঝুলি গ্রামের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি আব্দুল আজিজ আদালতে হাজিরা দেননি। ফলে চলতি বছরের ৭ নভেম্বর আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এই পরোয়ানার ভিত্তিতে গত ৯ ডিসেম্বর রাতে চৌগাছা থানার এএসআই আজাদ প্রকৃত আসামি আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে বাদ দিয়ে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান। জজ আদালত শীতকালীন অবকাশে থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আব্দুল আজিজকে জেলহাজতে পাঠান। এরপর থেকে নিরপরাধ আব্দুল আজিজ কারাবাসে রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজের বর্তমান বয়স প্রায় ৪০ হলেও নিরপরাধ আব্দুল আজিজের বয়স প্রায় ৬১ বছর। আর আসামি আব্দুল আজিজের বাবা আহাদ আলী কারিগর জীবিত। নিরপরাধ আব্দুল আজিজের বাবা আহাদ আলী দফাদার মৃত।

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার এএসআই আজাদ বলেন, ওয়ারেন্ট এবং ওই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ভালভাবে যাচাই-বাছাই করেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় তিনিই স্বীকার করেছেন তার নামে একটি মামলা ছিল যা তিনি মিটিয়ে ফেলেছেন। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার আব্দুল আজিজের পরিবার থেকেও জানানো হয়নি যে, সে মামালার আসামি না। তাহলে এখন একথা আসছে কেন? গ্রেফতার আব্দুল আজিজ যদি মামলার আসামি না হন তাহলে তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। নাম ঠিকানা মিল থাকার কারণে আমাদের কিছুই করার নেই।

এ ব্যাপারে আটক আব্দুল আজিজের ভাতিজা রাজু দফাদার এবং স্ত্রী জলি বেগম বলেন, আটকের সময় আমরা অনুরোধ করে পুলিশকে বলি তিনি দিন মজুরী করে সংসার চালান। তার নামে কোন মামলা নেই। পুলিশের ভুলেই তিনি দোষ না করেও এখন জেল খাটছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877